বিদ্যুৎ কেন যায়? লোডশেডিং কি ও কেন ? বিদ্যুৎ গেলেই লোডশেডিং ?
আমরা যারা বিদ্যুৎ বিভাগে জব করি তাদের প্রায় সময় লোডশেডিং অথবা বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, অনেকে আমাদের সাথে রাগারাগিও করে থাকেন। চলুন আজ এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। লোডশেডিং জানার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় আমাদেরকে জানতে হবে সেগুলো হল, শাট ডাউন ও অটো ট্রিপ কি?। এর পর বিষয়গুলো অনেকটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
লোডশেডিংঃ আমরা সকলেই জানি যে, চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন একটা টার্ম রয়েছে যেটার সামঞ্জস্যতা মেইনটেইন করা অনেক দরকার। সাধারণত যেটা হয়ে থাকে সেটা হচ্ছে গ্রীষ্ম কালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। প্রচুর ফ্যান ও এসি চলে। এখন বিষয় হচ্ছে যে, সব কিছুরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আমরা চাইলেও অনেক সময় উৎপাদন বেশী থাকলেও গ্রাহককে দিতে পারিনা কারণ, আমাদের সঞ্চালন লাইন বা অন্যান্য ঘাটতি থাকতে পারে। ধরে নেওয়া যাক শীতকালে কোন এলাকার লোড টোটাল ৫ মেগাওয়াট এবং আমাদের যে লাইন ও সাবস্টেশন (অনেকে যেটাকে পাওয়ার হাউজ বলেন) ক্যাপাসিটি আছে তাতে আমরা সর্বোচ্চ ১০ মেগাওয়াট বহন করতে পারব অথবা বিদ্যুৎ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলে দিল যে, আপনি কোনভাবেই ১০ মেগাওয়াটের বেশি লোড নিতে পারবেন না। যেহেতু শীতকালে আমার লোড ৫ মেগাওয়াট সুতরাং আমার কোন লোডশেডিং নাই । ধরা যাক গরম কালে আমার লোড বেড়ে ১২ মেগাওয়াট হয়ে গেল। এখন স্থানীয় কন্ট্রোল রুম এই অতিরিক্ত ২ মেগাওয়াট কোথায় পাবে? তখন যেটা করা হয় সেটা হল লোড ১০ মেগাওয়াটের মধ্যে আটকে রাখার জন্য ভাগে ভাগে আলাদা আলাদা এরিয়াকে কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ বিহীন রাখতে হয়। এটাই লোডশেডিং। লোডশেডিং চেনার উপায় হল লোডশেডিং সচারচর ১৫-২০ মিনিট হয়না। অন্তত ৪৫-১ ঘণ্টা প্লাস হয়ে থাকে। আপনারা যারা বিদ্যুৎ গেলেই লোডশেডিং বলে বকাঝকা করেন তাদের জানিয়ে রাখি যে এখন সারা দেশে লোডশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ যায়না বললেই চলে। তাহলে সমস্যা কোথায় তাইতো ? সেটা আমরা নিচে আলোচনা করব এবং এটা কেয়ারফুলি বুঝতে হবে।
ম্যানুয়াল শাট ডাউনঃ বিদ্যুৎ যাওয়ার অন্যতম কারণ হল এই ম্যানুয়াল শাটডাউন বা অফ। মানুষের যেমন শরীর রোগ হয় ডাক্তার দেখাতে হয়, তেমন বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যবহিত যন্ত্রপাতির ও মেইনটেনেন্স দরকার হয়। যখন কোন সাবস্টেশন মেইনটেনেন্স হয় তখন আমরা উক্ত এলাকায় সাধারণত মাইকিং করে জানিয়ে দিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ অফ রেখে কাজ করে থাকি যদি সেটা শহরকেন্দ্রিক হয় । আবার মাঝে মাঝে এমন হয়, কোন একটি ফিডারে ( গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী মোটা তার) গাছের ডাল এসে লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তখন উক্ত ফিডার বন্ধ রেখে গাছ কাটা হয়ে থাকে ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়। গ্রাম অঞ্চলের ম্যক্সিমাম বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এটা একটা অন্যতম কারণ। এছাড়া নতুন কোন গ্রাহক তৈরি হলে তাকে ফিডার থেকে সংযোগ দিতে সাময়িক বিদ্যুৎ অফ রাখা হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ সিস্টেমের কোথায় এর লোড বৃদ্ধি করতে হলে ট্রান্সফরমার চেঞ্জ করার দরকার হয় তখন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। এমন আরও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলো আসলে করা হয় গ্রাহককে কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে। উদাহরণটা এভাবে দেওয়া যায়। ধরা যাক কোন ব্যক্তির পেটে টিউমার এবং তাকে রেস্ট দিয়ে দিয়ে অপারেশন করা হল। যদি আপনি অপারেশন না করেন হয়ত মানুষটা মারাও যেতেও পারে। তেমনিভাবে আমরা যদি আগে ভাগেই বিদ্যুৎ লাইন ঠিক না রাখি তাহলে এমন হতে পারে যে, পুরা সিস্টেম ভেঙ্গে পড়তে পারে।
অটো ট্রিপঃ সাধারণ দেখা যায় যে, সকাল বেলা তেমন কোন লোড নাই আপনি এসি বা ফ্যানও চালাচ্ছেন না তাও বিদ্যুৎ চলে গেল, মনে মনে একটু গালি দিয়েই দিলেন আমাদেরকে, যে এই সকাল বেলাও লোডশেডিং ? আসলে ব্যাপারটা ভিন্ন। ধরুন হালকা একটু বাতাসে আপনার ১১ তলায় শুকাতে দেওয়া কাপড় এসে ফিডারের উপর পড়ল, সাথে সাথেই লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার হালকা বাতাসে যদি কোন গাছের ডাল এসে তারের উপর পড়ে তাহলেও ফিডার অফ হয়ে যাবে। কোন কারণে বিদ্যুৎ সিস্টেমে কোন গোলযোগ দেখা দিলে লাইন অটো অফ হয়ে যায়। তখন ফল্ট খুঁজতে হবে এবং খুঁজে সেটা রিমুভ করে লাইন অন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যারা পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্রাম এলাকায় থাকেন তাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় কারণ তাদের এলাকা থেকে অফিস অনেক দূরে হয়, লোক আসতে আসতে ও ফল্ট খুঁজতে অনেক সময় চলে যায় ফলে বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয়। আর শহর অঞ্চলের আশে পাশেই অফিস থাকে ও ফিডার তারের দূরত্ব কম থাকায় দ্রুত ফল্ট রিমুভ করা সম্ভব হয়ে থাকে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে বিদ্যুৎ গেলেই লোডশেডীং নয় আরও অনেকগুলো কারণ হতে পারে, তাই সুধু সুধু রাগ না করে করে ধৈর্য ধরুন। বর্তমান সরকার বিদ্যুতের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস যেটা আপনারাও দেখতে পাচ্ছেন। আগের থেকে কত ভাব বিদ্যুৎ থাকে এখন। এবং কিছুদিনের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও হয়ে যাবে। বিল নিয়ে অনেক সময় মন খারাপ করে থাকেন তাদেরকে বলে রাখি, যারা অল্প ইউনিট ব্যাবহার করে থাকেন তারা যে মূল্য পার ইউনিট এর জন্য আমাদেরকে দিয়ে থাকেন তা আমাদের কেনা মূল্য থেকেও কম। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান তাই তারা গ্রাহকের টাকা চুরি করে নিয়ে যায়না। বরং সরকার উলটা ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
From Facebook
Please Share the post
Leave a Reply